
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ১৬ বছরের নিচে বয়সীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করলো অস্ট্রেলিয়া। সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া ছিলো, এবার স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাত থেকে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক মাধ্যমের যে কোন প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
নতুন এক আইনের ফলে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা টিকটক, অ্যালফাবেটের ইউটিউব এবং মেটার ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে না।
নতুন আইন অনুযায়ী, শীর্ষ ১০টি প্ল্যাটফর্মকে শিশুদের প্রবেশাধিকার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অন্যথায় তাদের ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যদিও এই আইনের সমালোচনা করেছে বড় প্রযুক্তি সংস্থা ও অধিকারকর্মীরা। তবে বাবা-মা ও শিশু অধিকারকর্মীরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
শিশুদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায়, অন্যান্য দেশও অস্ট্রেলিয়ার এই বয়সভিত্তিক পদক্ষেপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট স্টাডিজের অধ্যাপক তামা লিভার বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেশ হলেও, শেষ দেশ হবে না। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো দেখছে কীভাবে প্রযুক্তি ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অস্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা বিপদের প্রাথমিক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে।
চার বছর আগে যখন মেটার অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস হয়ে জানা যায়, তাদের পণ্য কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে শরীরের ভাবমূর্তি সংক্রান্ত সমস্যা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াচ্ছে, তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। ডেনমার্ক থেকে মালয়েশিয়া এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
প্রথমত, এই নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে ১০টি প্ল্যাটফর্মকে টার্গেট করবে, তবে সরকার জানিয়েছে যে নতুন পণ্য এলে এবং ব্যবহারকারীরা বিকল্প প্ল্যাটফর্মে চলে গেলে তালিকাটি পরিবর্তন করা হবে।
প্রাথমিক ১০টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ইলন মাস্কের ‘এক্স’ বাদে বাকি সবাই জানিয়েছে, তারা এই আইন মেনে চলবে। তারা বয়স অনুমিতির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অনলাইন কার্যকলাপ থেকে বয়স অনুমান করবে অথবা সেলফি-ভিত্তিক বয়স অনুমান প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এছাড়া, আপলোড করা পরিচয়পত্র বা লিঙ্ক করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও বয়স যাচাই করা হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর জন্য এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা স্থির হচ্ছে এবং প্ল্যাটফর্মে কাটানো সময় কমছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
প্ল্যাটফর্মগুলো দাবি করেছে, ১৬ বছরের কম বয়সীদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তারা বেশি অর্থ পায় না। তবে স্বীকার করেছে, এই নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতের ব্যবহারকারী পেতে বাধা সৃষ্টি করবে। সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবার আগে ৮-১৫ বছর বয়সী ৮৬ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করত।

